karp fish
|

কার্প জাতীয় মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও সফলতার উপায়

কার্প জাতীয় মাছ চাষ বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় একটি মাছ চাষ পদ্ধতি। এটি সঠিক ভাবে পরিচালনা করলে কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কার্প জাতীয় মাছের বৃদ্ধি দ্রুত এবং এগুলোর বাজারমূল্যও ভালো। তাই আজকে আমরা কার্প জাতীয় মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলচনা করবো।

কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে রয়েছে ঃ রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, ব্লাক কার্প ইত্যাদি।

১. পুকুর প্রস্তুতিঃ

পুকুরে গভীরতাঃ পুকুরে ৫-৬ ফুট গভীর করুন।

পুকুর শুকানোঃ পুকুর থেকে পানি উত্তোলন করার পর ১০ থেকে ১৫ দিন পুকুর শুকিয়ে নিন।

চুন প্রয়োগঃ প্রতি শতকে ১- ১.৫ কেজি চুন প্রয়োগ করুন।

পানির PH মানঃ পানির Ph মান ৬.৫ থেকে ৮.৫ আর মধ্যে রাখলে ভালো।

লোনা/ মিঠাঃ কার্প জাতীয় মাছ মিঠা পানিতে ভালো হয়।

২. পোনা নির্বাচন ও মজুত

ভালো পোনা নির্বাচনঃ ভালো পোনা নিরবাচন করতে গেলে আপনাকে মাছের ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে।

পোনা আকারঃ ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি পোনা চাষে ভালো ফল দেয়।

পোনার মিশ্র চাষঃ এক সাথে অনেক রকমের পোনা এক সাথে দিলে পোনার চাষ খুবয় ভালো হয়। যেমনঃ কাতলা ( উপরিস্তর) , রুই (মধ্য স্তর), মৃগেল (নিচের স্তর)

পোনা নির্বাচনঃ প্রতি শতকে ৩০ থেকে ৪০ টি পোনা মজুত করুন।

পুকুরে পানি ও পোনার সামঞ্জস্যঃ পোনা ছাড়ার আগে যে পুকুরে পোনা ছাড়বেন সেই পুকুরে পানিতে কয়েক ঘণ্টা ওই পোনা গুলকে রাখুন।

৩. খাদ্য ব্যবস্থাপনা

প্রাকিতিক খাদ্যঃ কার্প মাছের জন্য প্রাকিতিক খাদ্য হিসাবে প্ল্যাঙ্কটন গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিতিম খাদ্যঃ কৃত্রিম খাদ্য হিসেবে চালের কুঁড়া, সরিষার খোল কার্প মাছের জন্য খুবয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।

মাছের ওজন অনুযায়ী খাদ্যঃ মাছের ওজন হিসেবে ৩/৫% খাবার প্রদান করুন।

খাবার দেওয়া সময়সুচিঃ দিনে ২ বার খাবার দিলে ভালো হয়, তবে ৩ বার দিলে কোন অসুবিধা নেয়। সকালে ৯ টার সময়, বিকেলে ৪ টার সময় আর রাতে ৮ টা সময় খাবার দেওয়া যাবে।

৪. পানির গুণমান নিয়ন্ত্রণ

পানির গুণমান পরীক্ষাঃ ১৫/ ২০ দিন পর পর পানির পানির গুণমান পরীক্ষা করুন। পানির গুণমান বাড়িতে পরীক্ষা করতে ph paper বাবহার করুন।

৫. কার্প মাছের রোগ ও নিয়ন্ত্রণঃ

মাছের ক্ষত রোগঃ

  • প্রাথমিকভাবে মাছের গায়ে লাল দাগ দেখা যায়।
  • লাল দাগের স্থলে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতের পাশে সাদা দাগ থাকে।
  • পাখানা, লেজ পচন এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়।

মাছের ক্ষত রোগের নিয়ন্ত্রণঃ

  • পানি পরিবতন করতে হবে।
  • ক্ষত রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতি শতকে ৫ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার বাবহার করুন।
  • আক্রান্ত পুকুরে প্রতি শতকে ৫০০/ ১০০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করুন।

মাছের লেজ ও পাখানা পচা রোগঃ

  • লেজ ও পাখানার পদা ছিঁড়ে যায় এবং রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
  • মাছের ব্যাপক মড়ক দেখা যায়।

রোগ নিয়ন্ত্রণঃ

  • পুকুরে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন এবং ৩০০ গ্রাম হারে লবণ প্রয়োগ করতে হবে।

মাছের ফুলকা পচা রোগঃ

  • ফুলকা ফুলে যায় এবং রক্ত জমাট বাধে।
  • অধিক তরল পদাথ বের হয়।
  • মাছের শ্বাসকষ্ট হয়।

প্রতিকারঃ

  • ২.৫ % লবণ জলে মিশিয়ে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘণ্টা রোগ আক্রান্ত মাছকে রাখতে হবে।
  • প্রতি কেজি খাবারের সাথে ১/২ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন মিশয়ে ৫/৭ দিন খাইয়াতে হবে।

মাছের উকুন রোগঃ

  • উকুন মাছের দেহের পাখানা লেজ ফুল্কার উপর লেগে থাকে। যা খালি চোখে দেখা যায় না।
  • উকুনের কারণে মাছের গা চুলকায় এবং চুল্কানর কারণে মাছ শক্ত কিছতে গা ঘষে। মাছের গা থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়।

প্রতিকারঃ

  • ০.৫% ডিপ্টেরেক্স প্রয়োগ করতে হবে (২ ডোজ) সপ্তহে ১ বার।
  • পুকুরে পানি শুকিয়ে ফালতে হবে তাহলে উকুনের ডিম নষ্ট হয়ে যাবে।
  • পুকুরে বাশের কমচি ডালপালা পুতে দিলে মাছ গা ঘষে আরাম পায়।

কার্প জাতীয় মাছ চাষ একটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ যা আমাদের দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মাছ চাষে উন্নত পদ্ধতি, সঠিক খাদ্য সরবরাহ, নিয়মিত পুকুর ব্যবস্থাপনা এবং রোগ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকায় এটি আয়ের একটি সম্ভাবনাময় উৎস। সঠিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই চাষ পদ্ধতি আরও উন্নত করা সম্ভব, যা কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তাই কার্প জাতীয় মাছ চাষে সচেতনতা ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *