চিংড়ি কখন খাদ্যের জন্য পাড়ের কাছাকাছি আসে?
চিংড়ি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী জলজ প্রাণী। চিংড়ি চাষে সফলতা পেতে তাদের খাদ্য গ্রহণের আচরণ এবং পাড়ের কাছে আসার সময় বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব, চিংড়ি কখন এবং কেন খাদ্যের জন্য পাড়ের কাছাকাছি আসে।
চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের সময়
চিংড়ি সাধারণত দিন এবং রাতের নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যের জন্য সক্রিয় হয়। তারা সাধারণত গোধূলি বা সন্ধ্যার সময় এবং ভোরে বেশি খাবার খায়।
১. গোধূলি সময়ে চিংড়ির আচরণ
গোধূলির সময় চিংড়ি বেশি সক্রিয় থাকে কারণ এই সময়ে পানির তাপমাত্রা এবং অক্সিজেনের পরিমাণ তাদের জন্য আরামদায়ক হয়। তারা তখন পাড়ের কাছাকাছি খাদ্যের সন্ধানে আসে।
২. রাতের সময় চিংড়ি
চিংড়ি নিশাচর প্রাণী, তাই রাতে তারা খাদ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়। পাড়ের কাছাকাছি পানিতে কম শব্দ এবং আলো থাকায় তারা এই সময়ে সেখানে নিরাপদ বোধ করে।
কেন চিংড়ি পাড়ের কাছে আসে?
১. খাদ্যের গন্ধ পেলে
চিংড়ি তাদের চারপাশে থাকা খাদ্যের গন্ধে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে। পাড়ের কাছাকাছি খাদ্য সরবরাহ করা হলে তারা সহজেই সেখানে জমায়েত হয়।
২. অক্সিজেনের প্রয়োজন
পাড়ের পানিতে তুলনামূলক বেশি অক্সিজেন থাকে কারণ সেখানে উদ্ভিদ বেশি এবং পানির সঞ্চালন ভালো। অক্সিজেনের অভাবে চিংড়ি গভীর পানি ছেড়ে পাড়ের দিকে চলে আসে।
৩. তাপমাত্রা
পাড়ের পানির তাপমাত্রা চিংড়ির জন্য আদর্শ থাকে (২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। গরম বা ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে তারা পাড়ের দিকে চলে আসে।
৪. প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্য
পাড়ের পানিতে শেওলা, ছোট জলজ প্রাণী, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি পাওয়া যায়। এটি চিংড়িকে পাড়ের কাছে আসতে প্রলুব্ধ করে।
খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি
চিংড়ি চাষে খাদ্য সরবরাহের সঠিক পদ্ধতি তাদের পাড়ের কাছে আনতে সহায়ক।
- পাড়ের কাছাকাছি নিয়মিত সময়ে খাদ্য দেওয়া।
- প্রোটিনসমৃদ্ধ কৃত্রিম খাদ্য এবং প্রাকৃতিক খাদ্য একত্রে সরবরাহ করা।
- অতিরিক্ত খাদ্য না দিয়ে পানির গুণমান বজায় রাখা।
পানি ও পরিবেশের গুণমান বজায় রাখা
- চিংড়ি পাড়ের কাছে আসতে পরিবেশগত কারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- পুকুরের পানিতে নিয়মিত চুন ব্যবহার এবং পানির পিএইচ লেভেল ৬.৫-৮.০ রাখা উচিত।
- অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এয়ার পাম্প ব্যবহার করা জরুরি।
চিংড়ি চাষে সফলতা পেতে তাদের খাদ্য গ্রহণের আচরণ এবং পাড়ের কাছে আসার সময়গুলো বুঝতে হবে। নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ, সঠিক পানির মান বজায় রাখা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করলে চিংড়ি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং চাষিরা লাভবান হন। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়ি চাষকে আরও লাভজনক করা সম্ভব।