বাংলাদেশের কাঁকড়া খামারের তালিকা: ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় গাইড
দেশের রপ্তানি যোগ্য কাঁকড়া মধ্যে ম্যানগ্রোভ মাড ক্র্যাব উল্লেখযোগ্য। এই কাঁকড়া উৎপাদনে খুলনা এবং চট্টগ্রাম অন্যতম। সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছ কাঁকড়া খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি খামার সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশের একমাত্র রফতানিজাত নরম কাঁকড়া উৎপাদন হয় সাতক্ষীরায়। এ জেলায় ৩৬৪টি খামারে এ নরম কাঁকড়া উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে শুধু শ্যামনগর উপজেলায়ই ৩৫০টি খামার গড়ে উঠেছে।
সাতক্ষীরা জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য কাঁকড়া খামারের নাম:
১.ভাই ভাই এগ্রো ক্র্যাব ফিশারিজ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা– ১৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই খামারটি ভাসমান প্লাস্টিকের খাঁচায় নরম কাঁকড়া উৎপাদন করে।
২.রোহন এগ্রো ক্র্যাব ফিশারিজ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা– এই খামারটি মাসে প্রায় ৯-১০ হাজার কেজি নরম কাঁকড়া উৎপাদন করে।
৩.সাকিব এগ্রো ফার্ম লিমিটেড, বুড়িগোয়ালিনী, সাতক্ষীরা– বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠিত এই খামারটি ৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে, যেখানে সাড়ে ৩ লাখ প্লাস্টিকের খাঁচায় কাঁকড়া চাষ করা হয়।
৪.ফরিদ নাইন স্টার এগ্রো বিডি লিমিটেড,দাতনেখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা– এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সাল থেকে নরম কাঁকড়া রপ্তানি করে আসছে, যা ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
৫.একোয়া ম্যাক্স– এই প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, যেমন জাপান, মালয়েশিয়া, চীন ও থাইল্যান্ডে কাঁকড়া রপ্তানি করে।
বাগেরহাট জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য কাঁকড়া খামারের নাম:
১.সুন্দরবন কাঁকড়া ফার্ম, মোংলা, বাগেরহাট– সুন্দরবন সংলগ্ন এই খামারটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে।
২.রূপসা কাঁকড়া চাষ প্রকল্প, শরণখোলা, বাগেরহাট– এই খামারটি আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩.বাগেরহাট কাঁকড়া এগ্রো ফার্ম, রামপাল, বাগেরহাট– নরম কাঁকড়া উৎপাদনে এই খামারটি পরিচিত এবং বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
খুলনা জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য নরম কাঁকড়া খামারের নাম ও বিবরণ:
1.সুন্দরবন কাঁকড়া ফার্ম,পাইকগাছা, খুলনা– সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থিত এই খামারটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে।
2.খুলনা কাঁকড়া এগ্রো ফার্ম,দাকোপ, খুলনা- এই খামারটি আধুনিক পদ্ধতিতে নরম কাঁকড়া চাষ করে এবং রপ্তানির জন্য কাঁকড়া প্রস্তুত করে।
3.কপোতাক্ষ কাঁকড়া চাষ প্রকল্প, কয়রা, খুলনা-কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী এই প্রকল্পটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে পরিচিত এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4.রূপসা কাঁকড়া ফার্ম,রূপসা, খুলনা– এই খামারটি নরম কাঁকড়া চাষে নিয়োজিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়া সরবরাহ করে।
5.বটিয়াঘাটা কাঁকড়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ,বটিয়াঘাটা, খুলনা– নরম কাঁকড়া উৎপাদনে এই প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং রপ্তানিমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বরগুনা জেলার নরম খোলস এর কাঁকড়ার খামারের নাম ও বিবরণ:
১.মনির গাজী কাঁকড়া ফার্ম , আমতলী, বরগুনা- প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিগত ১৫ বছর ধরে কাঁকড়া চাষ ও ব্যবসায় যুক্ত, যার সাফল্য দেখে শতাধিক উদ্যোগী মানুষ কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন।
২.হোগলাপাশা কাঁকড়া চাষ প্রকল্প, চরদুয়ানি, পাথরঘাটা, বরগুনা– স্থানীয় চাষি মনোজ বেপারীর পরিচালনায়, যেখানে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ করে ঢাকা ও খুলনার পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
৩. তুলসীরানী কাঁকড়া খামার, হোগলাপাশা, চরদুয়ানি, পাথরঘাটা, বরগুনা– স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা তুলসী রানীর পরিচালনায়, যেখানে কাঁকড়া চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
পটুয়াখালী জেলার উল্লেখযোগ্য নরম কাঁকড়া খামারের নাম ও বিবরণ:
1.চরমোন্তাজ কাঁকড়া ফার্ম, চরমোন্তাজ, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী– উপকূলীয় লবণাক্ত পানির সুবিধা নিয়ে এই খামারটি নরম কাঁকড়া চাষে বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে।
2.মহিপুর কাঁকড়া চাষ প্রকল্প,মহিপুর, কলাপাড়া, পটুয়াখালী– এই প্রকল্পটি আধুনিক পদ্ধতিতে নরম কাঁকড়া চাষ করে এবং রপ্তানির জন্য কাঁকড়া প্রস্তুত করে।
3.রাঙ্গাবালী কাঁকড়া এগ্রো ফার্ম,রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী– উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই খামারটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে পরিচিত এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4.কলাপাড়া কাঁকড়া ফার্ম,কলাপাড়া, পটুয়াখালী- এই খামারটি নরম কাঁকড়া চাষে নিয়োজিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়া সরবরাহ করে।
5.গলাচিপা কাঁকড়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, গলাচিপা, পটুয়াখালী– নরম কাঁকড়া উৎপাদনে এই প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং রপ্তানিমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ভোলা জেলার উল্লেখযোগ্য নরম কাঁকড়া খামারের নাম ও বিবরণ:
1. চর কুকরি মুকরি কাঁকড়া ফার্ম, চর কুকরি মুকরি, চরফ্যাশন, ভোলা– উপকূলীয় লবণাক্ত পানির সুবিধা নিয়ে এই খামারটি নরম কাঁকড়া চাষে বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে।
2.ঢালচর কাঁকড়া চাষ প্রকল্প,ঢালচর, চরফ্যাশন, ভোলা– এই প্রকল্পটি আধুনিক পদ্ধতিতে নরম কাঁকড়া চাষ করে এবং রপ্তানির জন্য কাঁকড়া প্রস্তুত করে।
3.চর পাতিলা কাঁকড়া এগ্রো ফার্ম,চর পাতিলা, চরফ্যাশন, ভোলা- উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই খামারটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে পরিচিত এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4.মানিকা কাঁকড়া ফার্ম, মানিকা, চরফ্যাশন, ভোলা– এই খামারটি নরম কাঁকড়া চাষে নিয়োজিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়া সরবরাহ করে।
5.কুকরি-মুকরি কাঁকড়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, কুকরি-মুকরি, চরফ্যাশন, ভোলা– নরম কাঁকড়া উৎপাদনে এই প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং রপ্তানিমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
কক্সবাজারের কাঁকড়া চাষের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো:
1.ইরাওয়ান ট্রেডিং: কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছরা, খুরুশকুল ইউনিয়নের মনুপাড়ায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল থেকে কাঁকড়া উৎপাদন ও রপ্তানি করছে।
2.অংছিনের কাঁকড়া খামার: কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের মনুপাড়ায় অবস্থিত এই খামারটি নরম কাঁকড়া উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে।
এগুলো ছাড়াও দেশে বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক কাঁকড়া খামার বিদ্যমান। জাদের কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপাজন করে থাকে। আপনার জানা যদি আরও উল্লেখযোগ্য কাঁকড়া খামার থেকে থাকে তাহলে আমারদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। “ধন্যবাদ”