বাংলাদেশের জনপ্রিয় গোল্ডফিশের জাত ছবিসহ তালিকা
গোল্ডফিশ (Goldfish) হল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাকোয়ারিয়াম মাছ। এর বিভিন্ন আকৃতি, রঙ এবং বৈচিত্র্য একে অ্যাকোয়ারিয়াম প্রেমীদের কাছে অতি প্রিয় করে তুলেছে। চলুন, গোল্ডফিশের কিছু উল্লেখযোগ্য জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. ধূমকেতু গোল্ডফিশ (Comet Goldfish)
ধূমকেতু গোল্ডফিশ খুব সহজেই চেনা যায় এর লম্বা ও সরু লেজের জন্য। এরা অত্যন্ত সক্রিয় এবং বড় পুকুর বা অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য আদর্শ। এদের রঙ সাধারণত কমলা, সাদা এবং লাল হয়।
প্রশ্নঃ ধূমকেতু গোল্ডফিশ কি বেশি খায়?
উত্তরঃ ধূমকেতু গোল্ডফিশ (Comet Goldfish) এরা খেতে বেশ পছন্দ করে। প্রতিদিন ২-৩ বার সামান্য পরিমাণ খাবার দিন, যা তারা ২-৩ মিনিটে খেয়ে ফেলতে পারে।
প্রশ্নঃ ধূমকেতু গোল্ডফিশের ট্যাঙ্কের আকার?
উত্তরঃ একটি ধূমকেতু গোল্ডফিশের 40-50 গ্যালন অথবা ১০০ লিটার ট্যাঙ্কের পানি প্রয়োজন কারন এরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে অনেক বড় হয়।
প্রশ্নঃ ধূমকেতু গোল্ডফিশ কত বড় হয়?
উত্তরঃ এরা 8 ইঞ্চি থেকে 12 ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, সম্পূর্ণটা নির্ভর করবে আপনার ট্যাঙ্কের উপরে।
প্রশ্নঃ ধূমকেতু গোল্ডফিশ ঠান্ডা জলে বাস করতে পারে কি?
উত্তরঃ গোল্ড ফিস সাধারণত ঠাণ্ডা পানির মাছ। তবে, অতিরুক্ত ঠাণ্ডা পানির কারনে ধূমকেতু গোল্ডফিশ মারা যেতে পারে।
২. শুবুনকিন (Shubunkin Goldfish)
শুবুনকিন গোল্ডফিশ দেখতে অনেকটা ধূমকেতু গোল্ডফিশের মতো হলেও এদের শরীর জুড়ে কালো, নীল এবং সাদা ছোপ দেখা যায়। এদের বলা হয় “কালাইডোস্কোপ গোল্ডফিশ”।
প্রশ্নঃ একটি শুবুনকিন একটি কই হয়?
উত্তরঃ শুবুনকিন আর কই পাখানা দেখতে অনেকটা একি রকম, কিন্তু রঙ ভিন্নর কারণে এদের কে চেনা যাই।
প্রশ্নঃ শুবুনকিন গোল্ডফিশের প্রজনন হয়?
উত্তরঃ একটি পুরুষ শুবুনকিন এবং স্ত্রী শুবুনকিন একই ট্যাঙ্কের মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রজনন সম্ভভ।
প্রশ্নঃ শুবুনকিন গোল্ডফিশের ট্যাঙ্ক সাইজ কত?
উত্তরঃ একটি শুবুনকিন গোল্ডফিশ কমপক্ষে ৮-১০ ইঞ্চি হয়। তাই প্রতিটি মাছের জন্য ১০০ লিটার পানি প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ শুবুনকিন কি খায়?
উত্তরঃ শুবুনকিন সর্বভুক প্রাণী, এরা বিভিন্ন ধরণে উদ্ভিদ এবং শেওলা খেয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ শুবুনকিন ঠান্ডা জলে বাস করতে পারে?
উত্তরঃ শুবুনকিন ঠান্ডা জলে বাস করতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা কন মাছের জন্য ভল নয়।
প্রশ্নঃ শুবুনকিন গোল্ডফিশকে কি প্রতিদিন খাওয়ানো যায়?
উত্তরঃ শুবুনকিন গোল্ডফিশকে দিনে ২ বার খাবার দিতে হয়, সকালে আর সন্ধার সময়।
৩. নিম্ফ গোল্ডফিশ (Nymph Goldfish)
নিম্ফ গোল্ডফিশের শরীর সাধারণ গোল্ডফিশের মতো হলেও এদের লেজ তুলনামূলক ছোট। পুকুরে এদের চাষ করা খুবই সহজ।
৪. তমসাবা গোল্ডফিশ (Tamasaba Goldfish)
তমসাবা গোল্ডফিশের শরীর ডিম্বাকৃতির এবং লেজ অনেকটা ভাঁজ করা চাদরের মতো। এদের প্রধানত লাল এবং সাদা রঙে দেখা যায়।
৫. ওয়াকিন গোল্ডফিশ (Wakin Goldfish)
ওয়াকিন গোল্ডফিশ সাধারণ গোল্ডফিশের একটি উন্নত প্রজাতি। এদের শরীর লম্বাটে এবং পুচ্ছ দ্বিখণ্ডিত। জাপানে এদের খুব জনপ্রিয়।
৬. ফ্যানটেইল গোল্ডফিশ (Fantail Goldfish)
ফ্যানটেইল গোল্ডফিশের পেছনের অংশে দ্বিখণ্ডিত লেজ থাকে যা দেখতে ফ্যানের মতো। এদের শরীর গোলাকার এবং এরা অ্যাকোয়ারিয়ামের শোভা বাড়াতে অনন্য।
৭. ভেলটেইল গোল্ডফিশ (Veiltail Goldfish)
ভেলটেইল গোল্ডফিশের প্রধান আকর্ষণ তাদের নরম এবং ঢেউ খেলানো লেজ। এদের রঙ সাধারণত লাল, সাদা, কমলা এবং সোনালি হয়।
৮. রিউকিন গোল্ডফিশ (Ryukin Goldfish)
রিউকিন গোল্ডফিশের শরীর ছোট ও গোলাকার, এবং পিঠের অংশ একটু উঁচু। এদের বিভিন্ন রঙের ভ্যারিয়েশন পাওয়া যায়।
৯. মুক্তা আকারের গোল্ডফিশ (Pearlscale Goldfish)
এদের দেহের আঁশ মুক্তার মতো দেখতে। গোলাকার দেহ এবং ছোট পাখনার জন্য এদের খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়।
১০. টেলিস্কোপ গোল্ডফিশ (Telescope Goldfish)
টেলিস্কোপ গোল্ডফিশের চোখ বড় এবং উঁচু হওয়ায় এদের সহজেই চেনা যায়। তবে এদের চোখ খুব সংবেদনশীল, তাই যত্নে রাখতে হয়।
১১. ওরান্ডা গোল্ডফিশ (Oranda Goldfish)
ওরান্ডা গোল্ডফিশের মাথায় বিশেষ ধরনের ফুলকির মতো গঠন দেখা যায়, যাকে ‘ক্রাউন’ বলা হয়। এদের রঙ সাধারণত সোনালি, লাল, সাদা ও কালো হয়।
১২. কার্লড-গিল গোল্ডফিশ (Curled-Gill Goldfish)
এই প্রজাতির গোল্ডফিশের ফুলকাগুলো সামান্য বাঁকানো থাকে। এদের দেহে কমলা ও সাদা রঙের মিশ্রণ দেখা যায়।
১৩. তোসাকিন গোল্ডফিশ (Tosakin Goldfish)
তোসাকিন গোল্ডফিশের লেজ ফ্যানের মতো ছড়ানো এবং শরীর গোলাকার। এদের মূলত জাপানের পুকুরে চাষ করা হয়।
১৪. উল্কা গোল্ডফিশ (Meteor Goldfish)
এই বিশেষ জাতের গোল্ডফিশের লেজ নেই, যা এদের ভিন্নতা এনে দেয়। তবে এরা দেখতে খুবই সুন্দর।
১৫. ফিনিক্স গোল্ডফিশ (Phoenix Goldfish)
ফিনিক্স গোল্ডফিশ দেখতে অনেকটা ফ্যানটেইলের মতো, তবে এদের লেজ এবং পাখনা আরও বড় এবং নরম।
১৬. পমপম গোল্ডফিশ (Pom-Pom Goldfish)
পমপম গোল্ডফিশের নাকের দুই পাশে তুলোর মতো গঠন থাকে, যা এদের বিশেষ আকর্ষণ।
১৭. লায়নহেড গোল্ডফিশ (Lionhead Goldfish)
লায়নহেড গোল্ডফিশের মাথার গঠন সিংহের কেশরের মতো, যা একে অন্য জাতের গোল্ডফিশ থেকে আলাদা করে।
১৮. রাঞ্চু গোল্ডফিশ (Ranchu Goldfish)
রাঞ্চু গোল্ডফিশকে “গোল্ডফিশের রাজা” বলা হয়। এদের দেহ গোলাকার এবং মাথার অংশ খুবই মসৃণ।
১৯. স্বর্গীয় চোখের গোল্ডফিশ (Celestial Eye Goldfish)
এদের চোখ উপরের দিকে উঁচু এবং স্থির থাকে। দেখতে খুবই অনন্য এবং অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য আদর্শ।
২০. বাবল আই গোল্ডফিশ (Bubble Eye Goldfish)
বাবল আই গোল্ডফিশের চোখের নিচে বড় বাবলের মতো গঠন থাকে। এই বাবলগুলো খুব নাজুক, তাই এদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
সবচেয়ে সুন্দর গোল্ডফিশ কোনটি?
সবচেয়ে সুন্দর গোল্ডফিশ হল টেলিস্কোপ গোল্ডফিশ। এই প্রজাতির গোল্ডফিশের চোখ বড় এবং উঁচু যা দেখতে অনেকটা টেলিস্কোপের লেন্সের মতো। এই মাছের চোখ গোল এবং উভয় পাশে বাইরে উঠে থাকে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মাছ প্রায় ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে।
টেলিস্কোপ গোল্ডফিশ ধীরগতির এবং শান্ত স্বভাবের। তাই এই কারণে আমরা টেলিস্কোপ গোল্ডফিশকে সবচেয়ে সুন্দর গোল্ডফিশ বলে মনে করি।
উপসংহার
গোল্ডফিশের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ জাতগুলো অ্যাকোয়ারিয়ামের শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি মাছপ্রেমীদেরও আনন্দ দেয়। সঠিক যত্ন এবং খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে এদের দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা সম্ভব। যদি আপনি অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য গোল্ডফিশ কিনতে চান, তাহলে তাদের প্রজাতি, আকার এবং যত্নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।